মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসেছি,স্বাধীন দেশ পেয়েছি কিন্তু জীবনের নিরাপত্তা পায়নি !





শেয়ার

নিজের কাছে মনে হয়েছে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি, জীবন চলার পথে এভাবে হোঁচট খাব এই ধরনের একটা অবস্থার সম্মুখীন হবো কখনো ভাবিনি কল্পনাও করিনি। একটা নীতি নিয়ে সবসময় চলি, কারো লাভ করতে না পারি কিন্তু কারো ক্ষতি করার কোন চেষ্টা বা মন-মানসিকতা আমার নাই।

 

কিন্তু আমার সাথে এমন কেনো হল কাকে প্রশ্ন করবো,নিজের বিবেককে প্রশ্ন করে যে উত্তর পাই না। স্বাধীন দেশে বসবাস করি জানি, দেশে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার যে এত অভাব তা নিজে যে পরিস্থিতিতে পড়েছি তাতে ভালোই বুঝতে পেরেছি।

 

এ কথাগুলোই বিমর্ষ মানে প্রতিবেদককে বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বরিশাল নার্সিং কলেজে অধ্যয়নরত নবম ব্যাচের ছাত্র শাওন চক্রবর্তী।

 

ঘটনার বিবরণ বলতে গিয়ে শাওন চক্রবর্তী আরো বলেন, বরিশালে হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করি। আমার পরিবার খুব কষ্ট করে আমার পড়ালেখার খরচ মেটায়। তাই আমি বরিশালে কয়েকটা টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ মেটাতে পরিবারকে সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করি।এভাবেই দিন যাচ্ছে চলে।

 

করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ হওয়ার কারণে মার্চ মাসে বরিশাল থেকে আমি আমার বাসায় চট্টগ্রামে চলে আসি। খুব কষ্ট করে আমার পড়ালেখার খরচ মেটায় আমার পরিবার। একদিকে করোনা পরিস্থিতি অন্যদিকে আমি বরিশালে যে দু একটা টিউশনি করতাম সে টিউশনিও এখন বন্ধ। আর্থিক অনটনে দিনযাপন করছিলাম। এইদিকে সেপ্টেম্বর মাসের ৯ তারিখ আমি ভাইভা আর অসপি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বরিশালের পথে রওনা দিই।

 

চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট নতুন রেল স্টেশন থেকে বিকাল ৫টায় মেঘনা এক্সপ্রেস নামে ট্রেনে উঠি। রাত সাড়ে নয়টার দিকে চাঁদপুর স্টেশনে নেমে অটোযোগে চাঁদপুর লঞ্চঘাট যাই। সেখান থেকে বরিশালের লঞ্চে উঠি রাত ৯টা ৪৫মিনিটে। লঞ্চ ছাড়ে রাত ১০টার একটু পর। লঞ্চ চলছে,আমি কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলাম। আনুমানিক সে সময় রাত ১টা ২৫মিনিট। তখনো আমি স্বজ্ঞানে। আমি মোবাইলে ছক্কা খেলছিলাম এমন সময় কালো করে একটা লোক আমার সামনে হেঁটে যাচ্ছিল শুধু এটাই খেয়াল করেছি,বাকি আর কিছু মনে নেই পরদিন সকালে আমি তেমন কিছুই আর মনে করতে পারছিলাম না। পিরোজপুর চড়খালী এলাকায় আমাকে নামিয়ে দেয়। আমাকে কে যেন একটা ৫০০ টাকার নোটও হাতে দেয় এবং একটা রিকশাতে তুলে দেয় স্টেশনে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। একটা লোক আমার ঠিকানা জানতে চাইলে আমি তাকে আমার মায়ের মোবাইল নাম্বার বলি এবং তিনি আমার মায়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে আমার সাথে কথা বলাইয়ে দেন। পরবর্তীতে আমার বন্ধুরা খবর পেয়ে আমাকে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। চিকিৎসা করান। এই অবস্থা থেকে আমার সুস্থ হতে প্রায় ৭দিন সময় লেগেছে। কি রকম যে অসুস্থতা লেগেছে তা ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না।

 

এদিকে ভুক্তভোগী শাওনের বড় ভাই জানান,বাসা থেকে যখনই সে বরিশালের পথে রওনা দিয়েছে, আমার মা ঘন্টাখানেক পর পর তাকে ফোন দিয়ে খবর নিত, সে কতদুর এগিয়েছে,কি অবস্থায় আছে। এক পর্যায়ে রাত ২টার পর তার মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না, আমার মা আমাদের সবাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে এবং তার মোবাইলে সংযোগ না পাওয়ার খবরে আমরা সবাই অস্থির হয়ে পড়ি। এরই মধ্যে অপরিচিত এক মোবাইল থেকে ফোন আসে মার মোবাইলে। কথা হয় শাওনের সাথে। মা বলছিল শাওনের কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এটা শুনার পর থেকে আমার মা বার বার মূর্ছা যেতে থাকে,ভয় হচ্ছিল,আতংকেও ছিলাম মা আবার ডায়বেটিস সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। মায়ের না আবার কিছু হয়ে যায়। পরবর্তীতে শাওনের ক্লাস ফ্রেন্ড দিশারী ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত জানায়। খুব খারাপ একটা সময় পার করেছি। ঘটনার ৫ থেকে ৭ দিন পর আমার ভাই যখন বরিশাল থেকে আবার বাসায় আসে আমার পরিবার যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে শাওনের মা প্রতিবেদককে জানান,এই ঘটনার পর থেকে বাসা থেকে কেউ বের হলে শুধু আতংক লাগে,ভয় হয়। মানসিক অস্থিরতা লাগে।

 

এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী শাওন প্রতিবেদককে বলেন,ভালোভাবে বাঁচতে চাই,জীবনের নিরাপত্তা চাই। এই আর্তনাদটুকু কাকে জানাব।

 

মুক্তমত


শেয়ার