কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে দশম দফায় স্বেচ্ছায় আরও সাড়ে ১২শ’ রোহিঙ্গা নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ত্যাগ করেছে। গতকাল রোববার দুপুর ও বিকালে উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠ থেকে ২৪টি বাসযোগে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে রওনা দেন তারা। এর আগে সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তার মাধ্যমে রোহিঙ্গারা সপরিবারে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে নিয়ে আসেন। ভাসানচরে অবস্থানরত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি (সিআইসি) তানবির আহমেদ বলেন, ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গারা দু’ভাগে ক্যাম্প ত্যাগ করেছেন। মূলত তারা চট্টগ্রামে রাতে পৌঁছাবেন। পরের দিন সকালে সেখান
হতে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে তারা রওয়ানা হবেন। আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এবারে ১২ শতাধিক রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে আসার কথা রয়েছে।
অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসু দ্দৌজা নয়ন জানান, দশম দফায় দু’বারে ১২ শতাধিক রোহিঙ্গা উখিয়া থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন। ভাসানচর যেতে জাহাজে উঠলে মূল সংখ্যা জানা যাবে।
এ বিষয়ে ৮-এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন জানান, দশম দফায় শিবিরগুলো থেকে এবারে ১২ শতাধিক রোহিঙ্গা ভাসানচরে যাওয়ার কথা রয়েছে। দুপুর ও বিকালে পৃথক দলে তারা ভাসানচরের উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেছেন।
এদিকে, গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে নবম দফায় চলতি বছরের শুরু পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে সরকার ভাসানচরে পাঠায়। ২০২০ সালের মে মাসে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে সেখানে নিয়ে রাখা হয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের সেনাদের অভিযান থেকে প্রাণে বাঁচতে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। এদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংস অভিযানের সময়ে পালিয়ে এসেছিলেন। শরণার্থীদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।