রাজধানীতে পরিবহন নৈরাজ্য দীর্ঘদিনের। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও বিগত সময়ে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ফ্র্যাঞ্চাইজি বাস সার্ভিস চালু করেছে সরকার। গত বছরের ২৬শে ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা নগর পরিবহন চালু করেছে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত এই রুটে ঢাকা নগর পরিবহন চলাচল করবে। চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে এই রুটের অন্য কোম্পানির বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক সার্ভিস চালুর ১ মাসেও বন্ধ হয়নি অন্য কোম্পানির বাস। রজনীগন্ধা, মালঞ্চ, মিডলাইন ও সময় ট্রান্সপোর্টের বাসগুলো চলছে দেদারছে।
এসব কোম্পানির বাসের চালকরা উল্টো বেপরোয়া
হয়ে ঢাকা নগর পরিবহন চলাচলে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যাত্রী নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছেন তারা। এ ছাড়া চলন্ত পথেও প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে দেখা গেছে। দখল করেছেন নগর পরিবহনের বাস স্টপেজগুলোও। তবে বাস রুট রেশনালাইজেশন কর্তৃপক্ষ বলছে- এই রুটে চলাচলকারী অন্য কোম্পানির বাসগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সঙ্গে ঢাকা নগর পরিবহনকে আরও শক্তিশালী করা হবে। প্রাথমিকভাবে এই রুটে সফলতা পেলে পুরো রাজধানীকে বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা নগর পরিবহন চালু হওয়ায় ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে স্বস্তি ফিরছে। যাত্রীদের ভোগান্তিও কমেছে। তবে সরকারের ফ্র্যাঞ্চাইজি বাস সার্ভিসের কারণে যাত্রী নিয়ে বিপাকে পড়েছে অন্য কোম্পানির বাসগুলো। ফলে এসব বাসের মালিক ও শ্রমিকরা নগর পরিবহন বন্ধের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। কোনো নিয়মনীতি না মেনেই ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে এখনো বাস চালাচ্ছেন।
এখানে পরীক্ষামূলকভাবে বাস রুট রেশনালাইজেশন সফল হলে পুরো রাজধানীতে রেশনালাইজেশন পদ্ধতি চালু হবে। এতে পরিবহন খাতের নৈরাজ্য কমে আসবে। আর এর ফলে পরিবহন খাতের অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে। এমন শঙ্কায় ঢাকা নগর পরিবহন বন্ধ করার চেষ্টা করছে অসাধুপায়ী বাস মালিকরা। সরকারের উচিত দ্রুত সময়ে এই রুটে অন্যসব কোম্পানির বাস নিষিদ্ধ করে নগর পরিবহন বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। তাহলে ঢাকায় পরিবহন খাতের বিপ্লব ঘটবে। যানজট থেকে মিলবে মুক্তি।
সরজমিন দেখা যায়, ঢাকা নগর পরিবহনের জন্য তৈরি করা কাউন্টারগুলোর সামনে অন্য কোম্পানির বাস রেখে দেয়া হচ্ছে। যেসব স্থানে নগর পরিবহন দাঁড়ানোর কথা সেসব স্থানে দাঁড়িয়ে আছে অন্য বাস। কখনো কখনো সেসব স্থানে রিকশার জটলা বাধছে। এতে যাত্রীরা নগর পরিবহনে উঠতে সমস্যায় পড়ছেন। কাউন্টার ছাড়া যাত্রী তুলছেন অন্যান্য গণপরিবহনগুলো। ফলে যথেষ্ট সংখ্যক যাত্রী পাচ্ছে না নগর পরিবহন বাসগুলো।
এদিকে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত ৪টি কোম্পানির যাত্রীবাহী বাস চলতে দেখা গেছে। গত বছরের ৩১শে ডিসেম্বরের পর অন্য বাসগুলো বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়ার পরও চলছে এসব পরিবহন। এ ছাড়া বাসের নাম ও রং পরিবর্তন করেও বাস চালাচ্ছেন কেউ কেউ। রজনীগন্ধা পরিবহনের কয়েকটি গাড়ির নাম পাল্টে নতুন নাম দিয়েছে টি-থ্রি পরিবহন। এ ছাড়া এ রুটে রজনীগন্ধা, মালঞ্চ, মিডলাইন ও সময় ট্রান্সপোর্ট দেদারছে চলাচল করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব বাস বন্ধে বাস রুট রেশনালাইজেশন বিআরটিএ’র মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেছে। কয়েকটি বাসের জরিমানাসহ ডাম্পিং করা হয়েছে। এতেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না অন্য কোম্পানিগুলোকে। ফলে এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এদিকে, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রান্সসিলভার সমন্বয়ে গত ২৬শে ডিসেম্বর থেকে ৫০টি বাস নিয়ে চলছে ঢাকা নগর পরিবহন। প্রথম থেকেই যাত্রীর তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অনেক কম বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। এতে নগর পরিবহন সংকটে প্রতিনিয়তই ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।
যাত্রীদের অভিযোগ, ঢাকা নগর পরিবহন চালু ভালো উদ্যোগ হলেও কার্যকরী পদক্ষেপের কারণে ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। যে পরিমাণে বাস থাকার কথা সে পরিমাণে নেই। ফলে অন্য পরিবহনে করে যাত্রীদেরকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকা নগর পরিবহন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহার না করায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে থাকতে হয়। এতে দূরের যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। একাধিক যাত্রীর অভিযোগ, নগর পরিবহনে মতিঝিল থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত অংশে যাত্রী কম থাকে। এই পরিবহনের বাসগুলো মতিঝিল না হয়ে গুলিস্তান হয়ে ফ্লাইওভার ব্যবহার করলে যাত্রী সংখ্যা বেড়ে যেত। সেই সঙ্গে যাতায়াত সময় কমে আসতো।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে- ঢাকা নগর পরিবহন চলাচলে অন্য কোম্পানির বাস বাধা সৃষ্টি করেছে এমন অভিযোগ পেয়েছেন তারা। শিগগিরই এই রুটে অন্য সব কোম্পানির বাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত এই রুটে ঢাকা নগর পরিবহন পরীক্ষামূলক চলাচল চলছে। গত ১ মাস অনেকটা সফল হয়েছে। এই রুটে বাসের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। চলতি বছরের মধ্যে রাজধানীর অন্যান্য রুটেও ঢাকা নগর পরিবহন চালু হবে। যারা পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।