বরিশালঃ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ ফারুক আহমেদ বলেছেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড সকলের জানার অধিকার রয়েছে। এসব উন্নয়ন কর্মকান্ড জনগণের করের টাকায় বাস্তবায়িত হয়। তাই এসব কর্মকান্ড থেকে তারা কিভাবে সুবিধা পেতে পারে সরকারের পক্ষ থেকে তা অবহিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আজ বরিশাল জেলার ঐতিহ্যবাহী ত্রিশ গোডাউন চত্ত্বরে আয়োজিত মহিলা সমাবেশ, ভ্রাম্যমান চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও সঙ্গীতানুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রচার কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জনাব মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান, বরিশাল জেলা তথ্য অফিসের পরিচালক মোঃ জাকির হোসেন, বরিশাল জেলা আনসার ও ভিডিপির কমান্ড্যান্ট মোঃ আমমার হোসেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং কয়েকশত মহিলা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি বলেন, করোনা অতিমারিতে দেশব্যাপী বাল্যবিবাহ প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর মোকাবিলায় সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকেই স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে। এ সময় তিনি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে, শিক্ষক, আনসার ও ভিডিপির গ্রাম দলনেতা-নেত্রী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করেন। একই সাথে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা গ্রহণের জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সমাজের কিছু লোক সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনা করে। সরকারের কর্মকান্ড এদের সামনে তুলে ধরে সমালোচনার জবাব দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, সামাজিক সচেতনতায় নারীর অবদান অপরিসীম। সরকার নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে ব্যাপক সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নারীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। বাল্যবিবাহ, যৌতুক, নারী নির্যাতন ইত্যাদি অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্ত রাখতে হবে। যে কোন স্থানে বাল্যবিবাহ সংগঠনের পূর্বেই স্থানীয় প্রশাসনকে খবর দেওয়ার জন্য তিনি সমবেত সকলের প্রতি অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, প্রশাসন আপনাদের পাশে রয়েছে। যে কোন ধরনের অপরাধ, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদের মত ঘটনা সমাজের সকলকে নিয়েই প্রতিরোধ করতে হবে।
প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম হয়েছিল বলেই বাঙালী একটা দেশ পেয়েছে, একটা পতাকা পেয়েছে। তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাঙালীর চির আরাধ্য স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ হচ্ছে। বিশেষত পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের জীবনধারা বদলে যাবে। তিনি বলেন, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় আজ পৃথিবী হাতের মুঠোয় এসেছে, ছেলেমেয়েরা ঘরে বসেই লেখাপড়া করছে। করোনাকালে সরকারের শাসনযন্ত্র ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণেই সচল ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে ফারুক দেওয়ান বলেন, এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো ক) গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রচার কার্যক্রম শক্তিশালীকরনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মেঘা প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ ও এর ফলাফল জনগণকে অবহিত করে সরকারকে সহযোগিতা করা, খ) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগ যেমন- একটি বাড়ী একটি খামার, আশ্রয়ণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, বিনিয়োগ বিকাশ এবং পরিবেশ সুরক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন মান ও আয় বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ সরকারকে যে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের প্রক্রিয়া তাতে দেশের সকল মানুষের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করা, গ) দেশব্যাপী গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে উদ্ধুদ্ধকরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি), ভিশন-২০২১ ও ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে সরকারকে সহযোগিতা করা। ঘ) মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশেষ প্রচারনাসহ বাল্যবিবাহ ও সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধে বিশেষ প্রচারনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ঙ) জলবায়ু পরিবর্তন জনিত উদ্ভুত সমস্যা মোকাবেলা ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে জনগনকে তথ্য প্রদান ও সচেতন করা। তিনি বলেন, মৌলিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিশু অধিকার, লিঙ্গ সমতা, নারী অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়ন, নারী নির্যাতন ও যৌতুক বিরোধী আইন, নারীর প্রতি সহিংসতা, পরিবার পরিকল্পনা, সেনিটেশন, এইচআইভি/এইডস, এসটিডিসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে গ্রামীন জনগোষ্ঠিকে সচেতন করতে এ প্রকল্প কাজ করছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মাঝে জঙ্গী তৎপরতা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ, নারী ও শিশু পাচার ইত্যাদি প্রতিরোধে প্রচলিত আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সহায়তা করাও এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে তিনি অবহিত করেন।
মহিলা সমাবেশ শেষে ভ্রাম্যমান চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অবহিত করার মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম চলছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের গণযোগাযোগ অধিদপ্তর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এ কাজ বাস্তবায়ন করছে। এলইডি ভ্রাম্যমান ভ্যানের মাধ্যমে প্রামান্যচিত্র ও নাটিকা আকারে গ্রামে গঞ্জে এ প্রকল্পের আওতায় চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে।
প্রামাণ্য অনুষ্ঠানে, পদ্মা সেতু ও রেল সংযোগ, ভাঙ্গা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, বঙ্গবন্ধু শিল্প পার্ক, ইকোনোমিক জোন ইত্যাদির উপর নির্মিত প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, ঢাকার মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকা-কক্সবাজার রেল সংযোগ, হাতির ঝিল প্রকল্প ইত্যাদির উপর নির্মিত প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সরকারের এসব মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন সূচিত হবে প্রামান্য চিত্রে তা তুলে ধরা হয়। এছাড়া সরকারের ১০ উদ্যোগের উপর নির্মিত প্রামান্যচিত্র ও নাটিকাও অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে জনগণকে সচেতন করতে তথ্যচিত্র দেখানো হয়। বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর নির্মিত তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
প্রকল্প পরিচালক বলেন এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে আনসার ও ভিডিপি কো-অপারেটিভ সোসাইটি (আভিকো) লিঃ এর মাধ্যমে দেশব্যাপী ১৯ হাজার স্পটে প্রামান্য চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। এ ছাড়া জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে ১৯ হাজার ৮৪৪ স্থানে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। গ্রামীণ নারী সমাজকে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় ১৩৯০টি মহিলা সমাবেশ করা হয়। ভাসমান জনগোষ্ঠীকে সচেতন করতে ৮ হাজার ৫২টি পথ সঙ্গীত অনুষ্ঠান করা হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৭ কোটি টাকা।
এর মধ্যে চলমান প্রান্তিকে বরিশাল জেলায় আনসার ও ভিডিপি কো-অপারেটিভ সোসাইটি (আভিকো) লিঃ এর মাধ্যমে বিগত মে/জুন মাসে ২৩০ টি ও বর্তমানে আরও ৩০টি প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। ৮-৯ অক্টোবর এ কার্যক্রম প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়া বরিশাল জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে নিয়মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শন, মহিলা সমাবেশ ও সঙ্গীতানুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
চলচ্চিত্র প্রদর্শন শেষে একটি মনোজ্ঞ সঙ্গীতানুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। স্থানীয় শিল্পীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।