মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় ২ হাজার ৫১টি ও কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ৬৬৫টিসহ মোট ২ হাজার ৭১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। গতকাল এক অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের উদ্বোধনকালে এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এবছর আমি এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিচ্ছি। এরপর আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ২০২২ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় নতুন ২ হাজার ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দিচ্ছি। এরমধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৬৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১ হাজার ১২২টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৩৬টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ১০৯টি, ১৮টি ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। এরপর সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত ঘোষণা সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সারা দেশে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান, শিক্ষার্থীদের সংখ্যা, পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং পাশের হার ইত্যাদি বিবেচনা করে সরকার সময়ে সময়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি সরকারিভাবে দিয়ে থাকে।
আজকের আদেশের আগ পর্যন্ত সারা দেশে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজার ৪৪৮টি।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতাভুক্ত এক হাজার ৬৫১টি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতাভুক্ত ৯৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বছর নতুন বেসরকারি (স্কুল ও কলেজ) এমপিওভুক্তকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ১০ই অক্টোবর ২০২১ থেকে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত আবেদন নেয়া হয়। যেসব উপজেলায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি, সেসব উপজেলায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া একটি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও’র প্রাথমিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছে মনে করলে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কমিটির সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে ১৫ দিনের মধ্যে সচিব বরাবর আপিল আবেদন করতে পারবেন। কোনো মিথ্যা তথ্য ও প্রমাণ দাখিল করে এমপিওভুক্ত হলে পরবর্তীতে তা প্রমাণ হলে দায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে।
নতুন তালিকায় দেখা যায়, দেশের মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের ৩২ উপজেলার একটি প্রতিষ্ঠানও পায়নি এমপিওভুক্তির অনুমোদন। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনভুক্ত ২২টি থানার একটি প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির অনুমোদনের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। এদিকে কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে ২২৩টি ও মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে ২০০টি উপজেলা থেকে একটি প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির অনুমোদনের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ধর্ম শিক্ষার বিষয়ে বলেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মশিক্ষা বাদ দেয়া হয়েছে বলে ব্যাপকভাবে প্রচারণা করা হচ্ছিল। তবে এর কোনো সত্যতা নেই। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ধর্মশিক্ষা ছিল, আছে এবং থাকবে। এটি বাদ দেয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, ধর্মের যে মূল কথা, তা যেন শিক্ষার্থীরা অনুধাবন করতে পারে, নিজের জীবনে চর্চা করতে পারে, নতুন কারিকুলামে সেইভাবে ধর্মশিক্ষার বইগুলো তৈরি করা হয়েছে। কাজেই আজ যারা ধর্মশিক্ষা তুলে দেয়া হয়েছে বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য ধর্মকে রক্ষা করা নয়, ধর্মের পক্ষে থাকা নয়। তাদের উদ্দেশ্য ধর্মকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করা। তাদের উদ্দেশ্য, দেশের ধর্মভীরু সাধারণ মানুষকে অন্যায়ভাবে উস্কে দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করা জানিয়ে তিনি দেশের সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানান, যারা ধর্মের নামে অপপ্রচার চালায়, মিথ্যাচার করে, তাদের সমস্ত অপপ্রচার আপনারা উপেক্ষা করুন।
করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আমাদের স্কুল-কলেজ বন্ধের কোনো পরিকল্পনা নেই। শিশুদের টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাদের টিকার আওতায় আনা গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে না। এসএসসি পরীক্ষা প্রসঙ্গে ডা. দীপু মনি বলেন, বন্যায় আমাদের অনেক শিক্ষার্থীর বইপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের নতুন বই দিতে হবে। আমরা অ্যাসেস করছি। প্রয়োজনে নতুন বই ছাপিয়ে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। এরপর অন্তত ২ সপ্তাহ তাদের সময় দিতে হবে। তবে সেই সময় এখনো বলা সম্ভব নয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্বে থাকা মহাপরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী প্রমুখ।