সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতের তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের





শেয়ার

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিরোধী-ভিন্নমতকে হয়রানি বন্ধ তথা ভীতিমুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভাবনীয় অর্জনে নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন জোগানো উন্নয়ন অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র মনে করে সহিংস রাজনৈতিক পরিবেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। বুধবার ওয়াশিংটনে ফরেন প্রেস সেন্টারে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক অগ্রাধিকার সংক্রান্ত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কথা হয়। ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন নিরাপত্তা কাউন্সিলের কৌশলগত যোগাযোগ সমন্বয়ক জন কিরবি একাধিকবার বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে এখানকার রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশার বিষয়টি খোলাসা করেন। হাই- ভোল্টেজ ওই ব্রিফিংয়ে কুর্দিস্তানে লাখো মানুষের বিক্ষোভ এবং ইরানের রেজিম চেঞ্জের দাবি সংক্রান্ত মধ্যপ্রাচ্যের এক মিডিয়া প্রতিনিধির প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েও বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে বিরোধী ভিন্নমতের অধিকার খর্ব করার উদাহরণ টানেন বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা।

ব্রিফিংয়ে জাস্ট নিউজের স্টেট ডিপার্টমেন্ট করেসপন্ডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারী এবং পরবর্তীতে কুর্দিস্তানের সাংবাদিকের প্রশ্নে মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, কেবল ইরান বা তার আগে উল্লেখ করা বাংলাদেশই নয়, পৃথিবীর সর্বত্রই স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ থাকা দরকার। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ‘স্পষ্ট’ এবং ‘অভিন্ন’ দাবি করে তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসন মনে করে অবশ্যই যে কোনো দেশে যে কারও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অবারিত সুযোগ থাকতে হবে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিরোধী দল বা ভিন্নমতকে বাধা নয় বরং সহযোগিতার তাগিদ দিয়ে মার্কিন নিরাপত্তা প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা বলেন, যে কোনো সরকারকে জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। আর এজন্য মুক্তমত এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ক্ষেত্রও প্রস্তুত করে দিতে হবে।

বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন করছে জানিয়ে ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি মুশফিক বলেন, নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো মুক্ত নন। সরকার দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে। তারা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামের কালো কানুনের প্রয়োগ করছে যখন তখন।

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে দু’টি প্রহসনের নির্বাচন দেখেছে দাবি করে তিনি বলেন, ওই নির্বাচন দু’টিতে যেসব প্রহসন এবং অনিয়ম হয়েছে তা স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় স্থান পেয়েছে।

 

এ নিয়ে বিশ্বে বিস্তর সমালোচনা রয়েছে। বাংলাদেশে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন অত্যাসন্ন উল্লেখ করে প্রশ্ন কর্তা সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশ আরেকটি কন্ট্রোল ইলেকশন দেখতে যাচ্ছে? না-কি এটি অংশগ্রহণমূলক হবে তা নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের এ বিষয়ে কোনো পর্যবেক্ষণ আছে কি? খোলামেলা জবাব দেন নিরাপত্তা কাউন্সিলের সমন্বয়ক এডমিরাল জন কিরবি। ব্রিফিংয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সাংবাদিক ইরানে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ব্যাপক হামলা, ধরপাকড়, মত প্রকাশে বাধা এবং বিরোধীপক্ষের আন্দোলনের সুযোগ না থাকা প্রসঙ্গে মার্কিন সরকারের অবস্থান জানতে চান।

জবাবে ইরানের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন এই এডমিরাল বলেন, ২-৩ সপ্তাহ আগেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে এটা স্পষ্ট করে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণভাবে দুনিয়ার সর্বত্র বিক্ষোভ করার অধিকারের পক্ষে সোচ্চার। এটা শুধু ইরান নয়, একটু আগে উল্লেখ করা বাংলাদেশ ইস্যুতেও আমাদের একই অবস্থান। তিনি বলেন, জনগণকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার সুযোগ দিতে হবে। কোনো ধরনের হয়রানি, সহিংসতা এবং ভীতি দেখানো ছাড়াই সরকারকে এ সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বিক্ষোভে কোনো ধরনের প্রাণহানি এবং সম্পদের ক্ষতি না হয়। মত প্রকাশের অধিকার সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থানে অনড় উল্লেখ করে পেন্টাগন ও স্টেট ডিপার্টমেন্টে এক সময় মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনকারী জন কিরবি বলেন, এ ইস্যুতে সারাবিশ্বে আমাদের অবস্থান অভিন্ন, এটা অব্যাহত থাকবে। একটি দেশে যখন শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সুযোগ থাকে সে দেশকেই প্রতিষ্ঠিত বলা যায়। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনায় রাখি।

 

রাজনীতি


শেয়ার

আরও পড়ুন