শক্তিশালী সংগঠন গড়তে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের তৎপরতা শুরু।





শেয়ার

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের ইউনিট কমিটিতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা ছিল দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি । সংগঠনটির নেতৃত্বে যারা ছিলেন তারা নিজেদের কমিটি যেমন পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি, তেমনি ইউনিটগুলোতেও দিতে পারেননি কমিটি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি না থাকায় অনেকটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে ছাত্রদল সৃষ্টি হয়নি নতুন নেতৃত্ব । তাছাড়া মহানগরীর ১১টি থানার স্থলে ১৫টি থানা হলেও বাড়তি থানাগুলোতেও কোনো কমিটি করতে পারোনি সাবেক ছাত্রদলের নেতারা। এ সব বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ছাত্রদলের বর্তমান আহব্বায়ক কমিটি তৎপরতা শুরু করেছে। তৃণমূলকে শক্তিশালী করার মিশনে ৭টি টিম করে ইউনিট প্রতিনিধি নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়েছে সাইফুল-তুহিনের কমিটি।

চট্টগ্রামে আছে ছাত্রদলের গৌরবময় অধ্যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম আইন কলেজ, পাহাড়তলী কলেজ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতি ছিল। কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফলও ছিল উল্লেখ করার মতো। কিন্তু সাংগঠনিক স্থবিরতায় এখন কলেজগুলোতে ছাত্রদলের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে; বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়েও বিরাজ করছে একই অবস্থা। ইউনিট কমিটিগুলো পুনর্গঠন না হওয়াকে এ অবস্থার জন্য দায়ী করা হচ্ছে।
নগর ছাত্রদলের আহব্বায়ক মো. সাইফুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে ছাত্রদলের নেতারা দায়িত্ব পালন করে গেছেন। কয়েকটি ইউনিট ছাড়া প্রায় সবগুলো ইউনিটে দীর্ঘদিন ধরে কমিটি নেই। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর সবগুলো ইউনিট কমিটি বাতিল করে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। সাতটি টিম করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। টিমের সদস্যরা যোগ্য নেতৃত্ব বের করে আনবেন। আমরা একটি দক্ষ ও আদর্শিক ছাত্রদল উপহার দেয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সীমাহীন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। কমিটির সবাইকে জড়ানো হয়েছে বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমায়। অনেকে জেলও খেটেছেন। কলেজগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের একক নিয়ন্ত্রণের কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো অনেক কঠিন। এরমধ্যেও আমরা ভাল সাড়া পাচ্ছি। যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে আমাদের নেতৃবৃন্দ নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
গেল বছরের ২৬ ডিসেম্বর মো. সাইফুল আলমকে আহব্বায়ক ও শরীফুল ইসলাম তুহিনকে সদস্য সচিব করে নগর ছাত্রদলের ৩৫ সদস্যের আহব্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এই কমিটির মাধ্যমে প্রকৃত ছাত্রদের হাতে আসে ছাত্রদল। তার আগে একই বছরের ৩০ নভেম্বর নগর ছাত্রদলের ২৭২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। বিবাহিত, ব্যবসায়ী, প্রবাসী এমনকি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মূল সংগঠন বিএনপির অনেক নেতাকেও এ কমিটিতে পদ দেয়া হয়। একমাস না পেরুতেই ২২ ডিসেম্বর এটিকে বর্ধিত করে ৫৩৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। যদিও চার দিন পর বিলুপ্ত হয় সেই কমিটি। তার আগে ২০১৩ সালের ২২ জুলাই নগর ছাত্রদলের ১১ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। একমাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দায়িত্ব দিয়ে গঠন করা সেই কমিটিতে গাজী সিরাজকে সভাপতি ও বেলায়েত হোসেন বুলুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। গাজী-বুলুর কমিটি চকবাজার থানা, আকবরশাহ থানা, আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ ও ইউএসটিসি ইউনিট কমিটি গঠন করলেও বাকি কমিটিগুলোতে কোনো তৎপরতা দেখাতে পারেনি। আবার আকবরশাহ থানা কমিটি ঘোষণার পরদিনই কেন্দ্র থেকে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছিল। তারও আগে ছাত্রদলের নগর কমিটি গঠিত হয়েছিল ২০০৩ সালে। মোশারফ হোসেন দিপ্তি ও আহমেদুল আলম রাসেলের ওই কমিটি ডবলমুরিং থানা কমিটি গঠন করে বাকি ইউনিটগুলোর আংশিক কমিটি গঠন করেছিল। এরপর ইউনিট কমিটি নিয়ে আর এগুতে পারেনি দিপ্তি-রাসেলের কমিটি। প্রায় সাত বছর পর ২০১০ সালের জুলাই মাসে থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে যোগ দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সিদ্ধান্ত হয় ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেদিন আগের কমিটির ৮১ জন সদস্য, ১১টি থানা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এই ভোটের ফলাফল ঘোষণা না করেই ফিরে যান কেন্দ্রীয় নেতারা। আর ছাত্রদলের ইউনিটগুলোর কার্যক্রমও ক্রমান্বয়ে ঝিমিয়ে পড়ে।
সদস্য-সচিব তুহিন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমান আমাদের উপর আস্থা রেখে যে কমিটি দিয়েছে ইনশাআল্লাহ আমরা তার প্রতিদান দেব।আমাদের আহবায়ক কমিটি ঘোষণার পর আমরা চট্টগ্রাম মহানগরীর রাজপথে মিছিল মিটিং করেছে এটা দীর্ঘদিন কেউ পারেনি। আমরা থানা ওয়ার্ড কমিটি গুলো এমন ভাবে করতে চাই যে কমিটির মাধ্যমে আগামী আন্দোলনে রাজপথে দখল হবে।
নগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহব্বায়ক মো. ফখরুল ইসলাম শাহীন বলেন, ছাত্রদলে দীর্ঘদিন ধরে একটা সংকট চলছিল। অনেক আগেই ইউনিট কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা প্রতিকূলতার কারণে কমিটিগুলো গঠন আটকে ছিল। এখন কমিটিগুলো পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই সবগুলো ইউনিট কমিটি গঠনের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
সাত টিমের দায়িত্বে যারা : পাহাড়তলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, হাজেরা-তুজ ডিগ্রি কলেজ, সরকারি আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ, ওমরগনি এম.ই.এস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, বাকলিয়া সরকারি কলেজ ও ছাফা মোতোলেব ডিগ্রি কলেজের সাংগঠনিক অবস্থা পর্যালোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুগ্ম আহব্বায়ক সাব্বির আহমেদ, এমএ হাসান বাপ্পা, মাহমুদুর রহমান বাবু, সদস্য শাহারিয়ার আহমেদ ও ইমরান হোসেন বাপ্পীকে।
চট্টগ্রাম কলেজ, সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ, সরকারি কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম আইন কলেজ, ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ডা. ফজলুল হাজরা ডিগ্রি কলেজ ও বাকলিয়া শহীদ এন.এম.এম.জে কলেজ এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুগ্ম আহব্বায়ক মো. আরিফুর রহমান মিঠু, জাহেদ হোসেন খাঁন জসি, সদস্য দেলোয়ার হোসেন শিশির ও তারেক আজিজ বিপ্লবকে।
হালিশহর থানা, ডবলমুরিং থানা, সরদাঘাট থানার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যুগ্ম আহব্বায়ক শহিদুল ইসলাম সুমন, রাজীবুল হক বাপ্পী, সামিয়াত আমিন জিসান, সদস্য শামসুদ্দীন শামসু ও কামরুল হাছান আকাশকে।
খুলশী, আকবরশাহ ও পাহাড়তলী থানার সাংগঠনিক পর্যালোচনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যুগ্ম আহব্বায়ক জিএম সালাহ উদ্দিন কাদের আসাদ, মো. ফখরুল ইসলাম শাহীন, সদস্য মো. আবুল কাউসার ও আল মামুন সাদ্দামকে।
বন্দর, ইপিজেড ও পতেঙ্গা থানার সাংগঠনিক পর্যালোচনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যুগ্ম আহব্বায়ক মো. আনাছ, নূর নবী মহররম, সদস্য এনামুল হক ও আবু হাসনাত জুয়েলকে।
কোতোয়ালী, চকবাজার ও বাকলিয়া থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুগ্ম আহব্বায়ক মো. জহির উদ্দীন বাবর, নূর জাফর নাঈম রাহুল, সদস্য নজরুল ইসলাম ও মাহামুদুল হাসান রাজুকে।
পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও বায়েজিদ বোস্তামী থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুগ্ম আহব্বায়ক মো. আরিফুর রহমান (মাস্টার আরিফ), মো. ইসমাইল হোসেন, সদস্য আব্বাস উদ্দিন ও রকি হোসেন পিচ্ছিকে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দকে ত্রিশ দিনের মধ্যে আহব্বায়ক ও সদস্য সচিব বরাবর সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও তথ্য সংগ্রহ ফরম দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে।

রাজনীতি


শেয়ার

আরও পড়ুন