জাতি গঠনে নারী সমাজের ভ‚মিকা বা জাতি ও নারী সমাজ





শেয়ার

“স্বর্ণ রৌপ্য অলংকারের যক্ষপূরীতে নারী

করিলে তোমায় বন্দিনী বল কোন সে অত্যাচারী?”

“কোন কালে একা হয়নিকো বিজয়ী পুরুষের তরবারী

শক্তি দিয়েছে, প্রেরণা দিয়েছে, বিজয়ী লক্ষী নারী!”
          নারীর প্রতি অবহেলা দেখে কবির সেই আক্ষেপ করার এখন আর কোন প্রয়োজন নেই। শিক্ষা দীক্ষা জ্ঞান গরিমায় আজ নারীসমাজ পুরুষের পাশাপাশি সমান যোগ্যতায় অগ্রসর হয়ে চলেছে। সেই অভিশপ্ত নারী ধর্মের গন্ডী থেকে বাহর হয়ে আজ নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চায় তার দায়িত্ব ও কর্তব ষোল আনা বজায় রেখে, শিক্ষার বিপুল ভোজে পুরুষের সাথে নারীরাও পংক্তিভোজের অধিকার রয়েছে। নারী আজ জয়যাত্রার পথে পা বাড়িয়েছে।
নারী সমাজঃ
          আমাদের দেশে নারী সমাজ যুগ যুগ ধরে পুরুষের হাতের ক্রিড়ানক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শিক্ষায়, দীক্ষায় অভিজ্ঞতায় এবং সামনে উৎকর্ষতায় তারা বহু পিছিে য় আছে কিন্তু গৃহের মধ্যে থেকে সংসারের অভ্যন্তরীণ দায়িত্ব গৃহিনীকেই পালন করতে হয় বলে এখানে নারীর দায়িত্ব কম থাকে না। শুধু অন্তঃপুরেই নয় বাইরের জগতেও নারীর ভ‚মিকা অপরিসীম। নারীরা বিভিন্ন সময়ে স্বয় গুনে যেসব যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন ততে তরান্বিত হয় যে, যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারলে আমাদের নারী সমাজ জাতীয় জীবনে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখতে সক্ষম হবে।
নারীর কর্মক্ষেত্রঃ

          বাংলাদেশের বর্তমান মাননীয় সরকার প্রধান নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী, জাতীয় সংসদ ভবনে মাননীয় স্পিকার নারী, বর্তমানকালে জাতীয় জীবনের উন্নতি সাধনে সকল কর্মক্ষেত্র নারী সমাজকে দায়িত্ব বহন করতে দেখা যাচ্ছে। তাদের ভ‚মিকার ক্ষেত্রে ও দিনস দিন প্রসারিত হচ্ছে। ঘরে ও বাইরে তারা আজ কর্মব্যস্ত জীবনের স্বাদ লাভ করছে। তাই আজকের নারী সমাজের কর্মক্ষেত্রে কেবল বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি মানসিক প্রয়োগে নারীরা আজ সমাজের বহু বিচিত্র ক্ষেত্রে নিজেদের বলিষ্ঠ ভ‚মিকা পালন করে চলেছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীর অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকার কথা স্মরণ করে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন-

          “বিশে^ যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর

          অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”।
জাতি গঠনে নারী সমাজের ভ‚মিকাঃ
          জাত গঠনে নারী সমাজের ভ‚মিকা অপরিসীম। নারীরা দেশ গঠনে এগিয়ে আসছে। তারা এখন আর গৃহবধু সেজে মাথায় ঘোমটা পায়ে মল, হাতে রুলি দিয়ে বসে নেই। তারা এখন পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করছে। তাইত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই উক্তির এখন সত্যতা মিলে। কবি বলেছেন-
          “চোখে চোখে আজ চাহিতে পারে না হতে রুলি পায়েমল মাথায় ঘোমটা ছিঁড়ে ফেলো নারী ভেঙ্গে ফেলো সে শিকল মাথার ঘোমটা তোমায় করেছে ভীরু উড়াও সে আবরণ।”
          আজ সফলতা পেয়েছে নারীর দীর্ঘ আত্মবিশ^াস ও সংগ্রামের ফল। জাত গঠনে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখতে নারী সমারে যে আগ্রহ আছে তা একুশে ফেব্রæয়ারীর মিছিলে, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে ৬২,৬৬,৬৯ এর মিছিলে, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে এবং ৯০ এর গণ অভ‚ত্থানে তাদের স্মরণীয় ভ‚মিকা থেকে উপলব্ধি করা যায়। এদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়, সচিবালয়, পুলিশ বাহিনী, সামরিক বাহিনী, অফিস আদালত ও ক‚টনৈতিক পর্যায়ে নারী সমাজের অবাধ পদাচরণ ঘটেছে। শিল্প, সাহিত্য ও গবেষণা কর্মেও নারীদের অবদান স্মরণীয়। তাই সহযোগীতার মনোভাব নিয়ে নারী সমাজকে যদি যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত করে দক্ষ ও কর্ম নারী সমাজ গড়ে তোলা যায়, তবে পুরুষের মত তারাও জাতি গঠনে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখতে সক্ষম হবে।
সর্বক্ষেত্রে নারীর সম্পৃক্ততাঃ
          জাতীয় জীবনে নারী জাতিকে উপেক্ষা করে উন্নয়ন সাধিত হতে পারে না। তাই বর্তমানে নারী জাতির শিক্ষা উন্নয়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্বরোপ করা হয়েছে। ফলে নারী আজ শিক্ষায় স্বরস্বতী, গৃহস্থলীতে দ্রৌপদী আর্তের সেবায় সুভদা, বীরত্বে দূর্গা এবং সাহসে-শৌর্যে রিজিয়া চাঁদ সুলতানার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নারী আজ কল্যাণময়ী ¯েœহময়ী এবং শান্তির পবিত্র আধার। এই জন্যই সেই আদর্শব্রতী বেগম রোকেয়া, শামসুন্নাহার মাহমুদ সুফিয়া কামাল ঘরে ঘরে জন্ম নিচ্ছেন এবং একই সাথে তারা বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং সমাজের সর্ববিষয়ে অনুশাসন পালন করে চলেছেন।
নারী কুসংস্কারের মুক্তঃ
          নারী আজ সুসংস্কার মুক্ত হয়ে ওঠতে একান্তভাবে বদ্ধপরিকর। তাই মনে হয় বেগম রোকেয়া অবরোধবাসিনী নাদের প্রতি যে আহŸান রেখে গেছেন তা আজ স্বার্থক হয়ে ওঠেছে। নারী আজ কর্মক্ষেত্রে তার পতাকা উড্ডীন করতে পুরুষের সাথে সমান তালে পা ফেলে চলেছে। দিন দিন গড়ে ওঠছে মহিলাদের স্বার্থরক্ষার জন্য বহু মহিলা সংগঠন। আন্তর্জাতিকভাবে নারীরা সংগঠিত হচ্ছেন। ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের বেইজিং এ অনুষ্ঠিত চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলন এক বিরাট পদক্ষেপ। এ সম্মেলনে ১৭৮টি দেশের প্রায় ২৫,০০০ প্রতিনিধি যোগদান করেন।
শেষ কথাঃ
          একটি আদর্শ জাতি গঠনে নারী সমাজের ভ‚মিকা, যদি নারীরা পুরুষের কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে কর্মক্ষেত্রে সমানভাবে পদচারণ করলে তবেই দশ তথা জাতির উন্নতি সম্ভব। আজ জীবনের সকল কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সাথে নারীকে কাজ করতে দেখে মনে হয়, কাজী নজরুল স্বার্থক সেই আদর্শব্রতী রমনী বেগম রোকেয়া স্বার্থক। জাতীয় জীবনের উন্নয়নে তাদের অবদান আজ সত্যিই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও নারীরা সন্তান জন্ম দেওয়া থেকে শুরু করে সাংসারিক যাবতীয় কাজকর্ম সমূহ এই নারীদেরকে আনঞ্জাম দিতে হয়। তাই নারীদেরকে অবজ্ঞা অবহেলা নয় তাদের সম্মান দিতে শিখুন।

ফিচার


শেয়ার