বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ।আর প্রত্যেক দেশকেই উন্নতি করতে হলে শ্রম তথা শ্রমিক নির্ভর হতে হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন শিল্পখাতের সাথে জড়িত রয়েছে অসংখ্য শ্রমিক। পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী দেখা যায় শুধু সড়ক পরিবহনের সাথে জড়িত প্রায় ৭০ লক্ষ শ্রমিক। কিন্তু বাংলাদেশের এই খাতটিতে রয়েছে কিছু অব্যবস্থাপনার। যার ফলে দৈনন্দিন সড়ক দূর্ঘটনা থেকে শুরু করে এসব শ্রমিকদের অনেককে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে। সড়ক পরিবহনের সাথে জড়িত এই শ্রমিকদের নেই কোন চাকরির নিশ্চয়তা। পাচ্ছে না পর্যাপ্ত বেতন ও সুবিধা।
তাছাড়া অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহনের সাথে থাকার ফলে স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। তারা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাদের ঘরের উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। কারণ তারা কাজ না করলে বেতন পায় না। এতে করে তাদেরকে জীবনযাপনে হিমশিম খেতে হয়।
চট্টগ্রাম গরীবুল্লাহ শাহ বাসস্ট্যান্ডের একজন বাস চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি দৈনিক ১৩-১৪ ঘন্টা বাস চালানোর বিনিময়ে ১১০০ টাকা পেয়ে থাকেন। যা দিয়ে তিনি তাঁর একটি বড় পরিবারের খরচ চালাতে নানামুখি সমস্যায় পড়েন।
এদিকে সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের প্রয়োজন প্রচুর বিশ্রাম কিন্তু তারা সেই সুযোগ পায় না। এর ফলে ঘুম চোখে নিয়ে অনেক সময় চালকরা দুর্ঘটনায় পতিত হয়। আবার এর ফলে দিন দিন তাদের স্বাস্হ্যেরও ক্ষতি সাধিত হচ্ছে । তাই পরিবহন শ্রমিকদের দৈনিক বেশ কিছু সময় বিশ্রামের জন্য বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। সাথে সাথে তাদের পর্যাপ্ত পারিশ্রমিকের দিকেও মালিক পক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে।এতে তারা যেমন সন্তুষ্ট থাকবে আবার এর ফলে সড়ক পথও হতে পারে আরো নিরাপদ।
বাংলাদেশ আরেকটি উল্লেখযোগ্য খাত হলো হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাত। যে খাতের সাথে জড়িত আছে প্রায় ৩০ লক্ষ শ্রমিকের জীবিকা। তাদের কর্মঘন্টা মানা হচ্ছে না ৮ ঘন্টা।বেশির ভাগ হোটেল-রেস্টুরেন্টে শ্রমিকরা কাজ করে ভোর বেল থেকে শুরু করে রাত অবধি পর্যন্ত। আবার সময়মতো বুঝে পাচ্ছে না তাদের বেতনও। চাকরি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে মালিকের মুখের কথায় এবং লঙ্গন হচ্ছে শ্রম আইন। তাছাড়া একটানা বিশ্রামহীন কাজের ফলে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা মহামারিতে অনেকেই চাকরি হারিয়েছে। ফলে অনেক শ্রমিকই এখন পেশা পরিবর্তনের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করছে। এদের জীবন যাত্রার মানও খুব একটা সন্তোষজনক বলা যায় না।
আমাদের উচিত এই শ্রমিকদের আইন সম্পর্কে সচেতন করা, যাতে কোন শ্রমিক তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত না হয়। তারা যেন কর্মস্থলে এবং মালিক থেকে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। তাছাড়া সরকার এবং শ্রমিক আইন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উচিত আইনের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত ও নিয়ন্ত্রন করা তাহলে এই মানুষগুলো পারবে সঠিকভাবে জীবনযাপন করতে।
ইফতিখার রশীদ মাহি, ৪৪ তম ব্যাচ, আইন অনুষদ, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়।