আপত্তি অগ্রাহ্য সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম





শেয়ার

নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আয়োজিত সংলাপগুলোতে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকরা ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছিলেন। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেও সংলাপে বলেছিলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করছে না। তবে সেটি শেষ পর্যন্ত আমলে নেয়নি ইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট করতে চায় নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে কমিশনের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ কমিশনের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান। বলেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। তবে ঠিক কতোটি আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ন্যূনতম একটি আসনেও এটি ব্যবহার হতে পারে।

  বেশির ভাগ দলেরই ইভিএম নিয়ে আপত্তি ছিল। এ বিষয় আলোচনায় এসেছে কিনা, জবাবে অশোক কুমার বলেন, সব বিষয় আমলে নিয়ে কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজকের বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি। কমিশন অভ্যন্তরীণভাবে আলোচনা করেছে। সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইভিএম ব্যবহারের সক্ষমতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন ইসি’র হাতে দেড় লাখ ইভিএম আছে। এগুলো দিয়ে সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৭৫টি আসনে ভোট নেয়া যাবে। এর চেয়ে বেশি আসনে ভোট করতে হলে ইভিএম কিনতে হবে। 

 

এখন থেকে সে উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রয়োজনে ইভিএম কেনার জন্য নতুন প্রকল্প নেয়া হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গত জুলাই মাসে ইসি যে সংলাপ করেছিল, তাতে ২২টি দল ইভিএম নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছিল। এর মধ্যে জাতীয় পার্টিসহ ১৮টি দল ইভিএম নিয়ে তাদের সংশয় ও সন্দেহের কথা স্পষ্টভাবেই বলেছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ নয়টি দল ইসি’র সংলাপ বর্জন করে, তারাও ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান করছে। ওদিকে সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট চেয়েছিল। যদিও ৩০০ আসনে এই যন্ত্র ব্যবহার করার মতো সক্ষমতা নেই নির্বাচন কমিশনের। আওয়ামী লীগ ছাড়াও আরও তিনটি দল শর্তসাপেক্ষে ইভিএমের পক্ষে বলেছে।  অন্যদিকে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করার কথা বলা হলেও তার ঠিক একদিন আগেই সংলাপে অংশ নেয়া দলগুলোর উদ্দেশ্যে পাঠানো চিঠিতে ইভিএম নিয়ে এখনো স্থির কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সোমবারের চিঠিতে বলা হয়, ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি এবং সমর্থন দুই-ই রয়েছে। কমিশন তা শ্রবণ করেছে এবং মতবিনিময় করেছে। 

ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে ইতিপূর্বে সকল দলের (কতিপয় দল অংশগ্রহণ করেনি) আমন্ত্রিত প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সংলাপ ও কর্মশালা করা হয়েছে। এ ছাড়া বুয়েটসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি বিষয়ে সর্বজনবিদিত বিশিষ্ট অধ্যাপকদের অংশগ্রহণে একাধিক সংলাপ ও কর্মশালা করা হয়েছে। যেহেতু সদ্য সমাপ্ত রাজনৈতিক সংলাপ ছাড়াও ইতিপূর্বে ইভিএম নিয়ে আরও সংলাপ, কর্মশালা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে এবং যেহেতু কমিশন ইভিএমের সার্বিক বিষয়ে এখনো স্থির কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এটি নিয়ে কর্মশালা, মতবিনিময়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে তার সার্বিক ফলাফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার বিষয়ে ‘ভিন্নভাবে’ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। গৃহীত সিদ্ধান্ত কমিশন যথাসময়ে সংশ্লিষ্টদেরকে অবহিত করবে। ব্লক চেইন পদ্ধতিতে বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে ঘরে বসে ই-ভোট প্রদানের প্রস্তাবটি আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রয়োগ সম্ভব নয়।

 

নির্বাচন


শেয়ার