সিন্ডিকেটের থাবায় চিনি





শেয়ার

বাজারে চিনির দাম বেড়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি করা হয় ৯৫ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে কখনো চিনির দাম ১০০ টাকার বেশি ওঠেনি। বাজারে প্যাকেটজাত চিনির ঘাটতি ও খোলা চিনির সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে বলে জানান তারা।  এর আগে এক মাসের ব্যবধানে দু’বার চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সরকার নির্ধারিত নতুন দাম অনুযায়ী, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৫ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। তবে বাজার পরিস্থিতি ভিন্ন।

রাজধানীর বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে সরকার গত ৬ই অক্টোবর কেজিতে দাম ৬ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনি ৯০ টাকা বেঁধে দেয়। তবে বাজারে এই দরে চিনি মিলছে না। খোলা চিনিই বিক্রি করা হচ্ছে ১০৫ টাকা কেজি দরে। আর প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়ার পর বাজারে এই চিনি সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।

রাজধানীর বিএনপি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী সিকদার এন্টারপ্রাইজের মালিক নাসির উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, সরকার খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করেছে কেজি ৯০ টাকা।

বিজ্ঞাপন  

কিন্তু এখন আমাদের প্রতি কেজি চিনি কিনতে খরচ হচ্ছে ১০২ টাকা। তা হলে কীভাবে ৯০ টাকায় বিক্রি করব? তিনি বলেন, চিনি উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বাজারে চিনির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এই কারণেই এখন চিনির দাম বাড়ছে। গত সপ্তাহেও এক বস্তা চিনি ৪ হাজার ৫০০ টাকায় কিনতে পেরেছি। এখন বস্তা কিনতে হচ্ছে ৫ হাজার ১০০ টাকায়। তার সঙ্গে রয়েছে পরিবহন খরচ।

 

সবুজ জেনারেল স্টোরের মালিক সবুজ বলেন, আমাকে এখন বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে বলেই বেশি দামে বিক্রি করছি। এর আগে কখনোই প্রতি কেজি চিনির দাম ১০০ টাকা ছাড়ায়নি। চিনির বাজারে অস্থিরতার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও দেশবন্ধু চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান নানামুখী সংকট ও প্রতিবন্ধকতার কথা জানালেন। তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমরা সরকারের কাছে বারবার ধরনা দিয়েও সমস্যার সমাধান পাচ্ছি না। আমরা সরকার নির্ধারিত দামেই চিনি দেয়ার চেষ্টা করছি। এতে আমাদের লোকসান হচ্ছে।

গোলাম রহমান বলেন, ব্যাংকগুলো এলসি করতে রাজি হচ্ছে না। একটা জাহাজে কম করে হলেও ২৭ মিলিয়ন থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলারের এলসি খুলতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, তিন মিলিয়ন ডলারের বেশি এলসি খোলা যাবে না। সে ক্ষেত্রে আমাদের পরপর নয়টি এলসি খুলতে হচ্ছে। ডলার কিনতে হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকা দরে। ৮৪ টাকা দামে পণ্য বিক্রি করার পর যখন টাকা পরিশোধ করতে যাচ্ছি তখন প্রতি ডলারে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। এতে আমরা অনেক লোকসানের মুখে পড়েছি। এ জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সরকারকে আবারো বসতে বলেছি যে, আপনারা বাজার যাচাই করে দাম নির্ধারণ করুন। 

দেশে বছরে ২২ থেকে ২৫ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত বছর ২৪ লাখ টন চিনি আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত ১৮ লাখ টন চিনি আমদানি বা বুকিং দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ গত এক বছরে ৭ লাখ টন চিনি কম আমদানি হয়েছে। 

বাজারে প্যাকেট চিনির সংকট দেখা যাচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্যাকেট চিনি বাংলাদেশে অনেক কম চলে। বেশির ভাগই ৫০ কেজির চিনি বিক্রি হয়। আমরা এখনো সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করছি। কয়েক হাত ঘুরে বাজারে চিনি পৌঁছানোর কারণে হয়তো দাম বেড়ে গেছে। 

এ দিকে বাজারে খোলা আটা প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ টাকায়, গত সপ্তাহে যা ছিল ৫৫ টাকা। খোলা ময়দা বিক্রি করা হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে, গত সপ্তাহে এই ময়দা বিক্রি হয় ৬০ টাকায়। পিয়াজ কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫ টাকায়।

ওদিকে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সবজি। বলতে গেলে কোনো সবজিই প্রতি কেজি ৬০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। গোল বেগুন প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা; পটোল, ঢেঁড়শ, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা; শিম ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, পাকা টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, কাঁচা টমেটো ১০০ টাকা, গাজর ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ছোট আকারের ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৫০ টাকা, লাউ আকারভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

 

জাতীয়


শেয়ার