আজকের সর্বশেষ

বর্ষার আগমনে বেড়ে যাবে সন্দ্বীপ নৌ রুটে যাত্রীদের ভোগান্তি, অন্তত দিনে শীপ ২ট্রিপ দেওয়া হোক

বাদশা মিয়া ফাউন্ডেশনের ইফতার সামগ্রী বিতরণ

রোজাদার সেবায় সাবেক মেয়র মনজুর আলম-এর ইফতার ও সেহেরী সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম ইমাম, মুয়াজ্জিনদের মাধ্যমে শুরু

রমজান উপলক্ষে "গাজী মার্কেট তরুণ প্রবাসী ঐক্য পরিষদ'র পক্ষ হতে প্রায় ৮০ পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ

হাসান মেহেদী'র 'নজরুল-সাহিত্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ' প্রকাশ

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের আজীবন সদস্যদের নিয়ে প্রথমবারের মতো মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

দ্বীপবন্ধু স্মৃতি মেধা বৃত্তির পুরুষ্কার বিতরন

মাস্টার ছায়েদুল হকের ১৯ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল


আগামী ২-৩ মাসেও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ঠিক হবে না





শেয়ার

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বৈশ্বিক মন্দার কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমছে। তবে দেশে পণ্যমূল্যে বড় কোনো পতন দেখছি না। খাদ্যমূল্য বরং বেড়েছে। দেশের অর্থনীতি সংকটে নেই, তবে চাপে আছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে এখন যে অস্থিরতা চলছে, তা সহসাই কাটবে না। ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থাকবে। যারা বলছেন আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে সংকট কেটে যাবে, তারা চটজলদি রাজনৈতিক চিন্তা থেকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন। সরকারের কর্মকর্তাদের এসব চটজলদি বক্তব্য বাজার আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে।

মঙ্গলবার অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ইআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শারমিন রিনভী। ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যে ধরনের উদ্দীপনা নিয়ে ২০১৪ সালে খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল পরে আর হয়নি।

কারণ স্বার্থ আদায়কারী সংগঠনগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী। আর এর সুবিধাভোগীরা তেমন সংগঠিত নয়। গভর্নর আমানত ও ঋণের নয়ছয় এর বাইরে না। আমিও এর বাইরে না। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সামপ্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জটিল এবং সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। দেশে এবং বিশ্বে এরকম পরিস্থিতি হতে পারে তা আগেই বলা হয়েছিল। পাশাপাশি এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় স্বল্পমেয়াদি স্থিতিকরণ কর্মসূচি জরুরি উল্লেখ করা হয়েছিল। যে কারণে জিডিপি’র অভিলাষ সংযত করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আর্থিক ও বৈদেশিক লেনদেন নীতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিনিময় হার এবং মূল্যস্ফীতিতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা দ্রুত শেষ হবে না।

 

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ড. দেবপ্রিয়। তিনি প্রশ্ন করেন ৪৪ টাকা নিয়ে ৫ টাকা ফেরতের ভিত্তি নিয়েও। বলেন, ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৫ টাকা করে কমিয়েছে সরকার। কিন্তু ৪৪ টাকা নিয়ে ৫ টাকা ফেরতের সিদ্ধান্তের ভিত্তি কি? এই মুহূর্তে যে সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে, তার ভিত্তি কি? কে নিচ্ছে এসব সিদ্ধান্ত?’ তিনি প্রশ্ন করেন, এটা কি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না আর্থিক সিদ্ধান্ত? এটা কি সামাজিক সিদ্ধান্ত? সিদ্ধান্তগুলো কোথায় হচ্ছে? এটা কি মন্ত্রিপরিষদে হচ্ছে, এটা এনার্জি কমিশনে হচ্ছে, এটা মন্ত্রণালয়ে হচ্ছে নাকি ব্যক্তিগতভাবে হচ্ছে? না কোনো বিশেষ মহল এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে?

এ সময় জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্তের জায়গা পরিষ্কার নয় দাবি করে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম ৩৪ থেকে ৪৪ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে ৫ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এবং এটা হঠকারিতা। জবাবদিহিতার জায়গা দুর্বল হয়ে গেছে। নীতির বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে হবে। কারণ বাজার খারাপ জিনিস। বাজারের যা অবস্থা তাতে সরকারের এখনই সিরিয়াসলি সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। স্বল্পকালীন ও মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না। বিশেষ জায়গা থেকে বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এতে মেধাভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্যক্তি বিনিয়োগ বিকশিত হচ্ছে না। এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে সরকার, মানুষ ও দেশের। বিদ্যুৎ জ্বালানিতে প্রতিযোগিতার সুযোগ তুলে নেয়া হয়েছে। বিচারের সুযোগও তুলে নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, তেলে কর আহরণ কতো? কিছুই কিন্তু জানি না। শুধু যদি একটি মন্ত্রণালয়, একজন সচিবের মাধ্যমে মধ্যরাতে সিদ্ধান্ত দেন যে দুই সপ্তাহ পর এটা করতে হবে, তিন সপ্তাহ পর এটা করতে হবে, তাহলে এমনই হবে। এসব অস্থায়ী ভিত্তিতে নেয়া সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বড় প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা বলেন। দুই-তিনটা সবচেয়ে বড় প্রকল্প আদৌ বাংলাদেশের জন্য উপকারী হবে কিনা জানি না। আমি কোনো প্রকল্পের কথা বলছি, আপনারা বুঝতে পেরেছেন। যে প্রকল্পটি (রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প) ১২ বিলিয়ন ডলারে বাস্তবায়ন করছি, একই প্রকল্প ভারত ৩ বিলিয়ন ডলারে বানাচ্ছে। তাহলে কতো টাকা এদিক-ওদিক হচ্ছে তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। 

ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকার রাজনৈতিক ঘাটতি ঢাকতে দৃশ্যমান প্রকল্প হাতে নেয়। গত কয়েক বছরে সরকারের পক্ষ থেকে ভৌত অবকাঠামোতে যে পরিমাণ ব্যয় করা হয়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সে পরিমাণ মনোযোগ দেয়া হয়নি। ২০টি মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের পর তা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হলে আমাদের দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। আর এজন্য আমাদের শিক্ষা খাতের যেমন প্রয়োজন রয়েছে তেমনি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে স্বাস্থ্য খাতের। পাশাপাশি সরকারের রাজনৈতিক দর্শনের কারণে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বৈষম্য হচ্ছে। করোনার সময় সহায়তা বিতরণে বড় ধরনের বৈষম্য দেখা দিয়েছে। যার যা প্রাপ্য তা নথিভুক্ত হয়নি। ফলে প্রমাণিত হয়েছে সরকারের সেবা পাওয়ায় দুর্বল নাগরিকদের অভিগমন সহজ নয়।

দেশ চাপে আছে দাবি করে তিনি বলেন, চাপে থাকলেও সংকটে নেই বাংলাদেশ। তবে চাপ যদি সময়মতো মোকাবিলা না করা হয় বা অস্বীকারের মনোভাব থাকে তাহলে তা বড়সড় বিপদে পরিণত হবে বলেও সতর্ক করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে ৪ ধরনের বিচ্যুতি রয়েছে উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ না হওয়া, কর আহরণের দুর্বলতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাব এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বৈষম্য অর্থনীতির প্রধান বিচ্যুতি। এসব বিচ্যুতি ঠিক মোকাবিলা করা না গেলে পরবর্তী উত্তরণ পর্যায়ে পৌঁছান সম্ভব হবে না। একইসঙ্গে যে অর্জন হয়েছে সেটিও টেকসই হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বিষয়টিকে এভাবে বলা যায়: প্লেন এক ইঞ্জিন দিয়ে চলছে, দ্বিতীয় ইঞ্জিন নেই। ফলে এই প্লেন বেশি দূর যেতে পারবে না।

যদিও গত এক দশককে দেশের ইতিহাসে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিশ্রুতিশীল দশক বলে স্বীকৃতি দেন তিনি। এটিকে সফল দশক বলেও সংলাপে মন্তব্য করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে দেশ নিম্ন আয় থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ে উন্নীত হয়েছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে এসেছে। সফলভাবে এমডিজি অর্জন করেছে। এসডিজি বাস্তবায়নে এগিয়েছে। মানুষের আয়ুষ্কাল, কৃষি উৎপাদন, শিক্ষার হার, মাথাপিছু রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে। বলতে হবে গত ১৩ বছর ছিল অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সমৃদ্ধ সময়। এতকিছুর পরও পেশাদার অর্থনীতিবিদদের দুঃখের কিছু বিষয় রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন সিপিডি’র বিশেষ ফেলো।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, পদ্মা সেতু হবে না এ কথা কেউ বলেনি। অর্থ নিয়ে কথা বলা হয়েছিল। অর্থ ছাড়ে বড় ঝুঁকি নিয়ে কথা বলা হয়েছিল। পদ্মা ব্রিজ নিয়ে কোনো বিরোধিতা ছিল না। কারণ এটা পাকিস্তান আমল থেকেই সবার দাবি ছিল। অর্থনীতিবিদরা বিরোধিতা করেছে এটা অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু নয়।

 

অর্থ ও বাণিজ্য


শেয়ার